
সোমবার ০৫ মে ২০২৫
রিয়া পাত্র : বছর২০'র যুবক, ঘুরছেন বইমেলার চমক ম্যাসকটের সঙ্গে। এক সপ্তাহে এই ভিড়ের মাঝে হেঁটে যাওয়া কিছুটা আয়ত্ত করে ফেলেছেন। প্রায় একই সময়ে আজকাল-এর স্টলের দুই দরজায় স্থির মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দু' জন। একজনের বয়স ৩২, অন্যজনের কম বেশি ৩৬। দু' দিকে দাঁড়িয়ে সামলাচ্ছেন ভিড়। লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নের কিছুটা আগে, মাঠের একপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বিশ্বজিৎ, বয়স ৪৫।
একজন ক্রেতার হাতে বই দেখে তৎক্ষণাৎ ফোন করলেন ঘরে। ছেলে কোন বই কিনতে বলেছেন, জেনে নিলেন একবার। এরকম ছড়িয়ে ছিটিয়ে আরও অনেকজন। এঁদের অফিস আলাদা অনেকের, কারও আবার একই অফিস। কিন্তু এঁদের মিল? এরা বইমেলার নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকছেন ধূলোভরা মাঠে। বিশেষ এক সংস্থা, প্রতিবার একঝাঁক নিরাপত্তারক্ষী পাঠায়, বইমেলা প্রাঙ্গণের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।
জানা গেল, মঙ্গলবার সন্ধেয় ওই সংস্থার অন্তত ১২০জন বিভিন্ন প্রান্ত সামলাচ্ছেন। অনেক স্টলেও নিরাপত্তারক্ষীরা থাকেন। সেক্ষেত্রে ওই স্টল নিজেদের দায়িত্বের নিরাপত্তারক্ষীদের আনেন মেলার কয়েকদিনের জন্য। কেউ দরজায় দাঁড়িয়ে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে দেখছেন। বইয়ের গন্ধের মাঝেই বিকেল পেরিয়ে সন্ধেকে রাতের দিকে যেতে দেখছেন।
সৌভিক কুন্ডু। বয়স ১৯। উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছেন গেল বছর। একটি সংস্থায় যুক্ত। সেই সংস্থা তাঁকে বইমেলায় পাঠিয়েছে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে। এর আগে বইমেলা আসেননি এমনটা নয়। এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে, হুল্লোড় করেছেন। কিন্তু এবার বইমেলা তাঁর রোজগারের জায়গা। কাজের মাঝে অন্যদের হুল্লোড় দেখছেন। কী কাজ করছেন? দিনের বেলা তাঁর দায়িত্ব থাকে ম্যাসকটদের সামনে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো। ভিড়ের মাঝে তাদের এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া। রাতের বেলা নজর রাখতে হয় মেলায়।
ঠাকুরনগরের রাজ বাইন। হাতে আঁকড়ে ধরে রয়েছেন একটি প্যাকেট। বই আছে তাতে ।রোজের ডিউটির চাপে বাড়ি যাওয়া হয়ে উঠছে না তাঁর। একসপ্তাহ ডিউটি করে, উইকএন্ড, ছুটির দিনের ভিড় সামলে আজ রাতে বাড়ি ফিরবেন। নিয়ে যাবেন বইয়ের ওই প্যাকেট ।
কী আছে তাতে? আছে সেই বই, বাবার বইমেলায় ডিউটি থাকবে শুনেই মেয়ে যে বইয়ের কথা বারবার মেসেজে লিখে পাঠিয়েছে। সেই বই আঁকড়ে বাবা, এক সপ্তাহ পর মেয়েকে দেখলেই, তুলে দেবেন সেই বই। এটুকুই খুশি। তারপর আবার কাল ফিরে এসে, সামলাবেন স্টলের ভিড়।