
সোমবার ০৫ মে ২০২৫
পর্ণী ব্যানার্জি : তীব্র দাবদহের পর এসেছে বর্ষা। এই বৃষ্টিতে শখ করে হোক কি নাচার হয়ে, ভেজেন সবাই।
তীব্র গরমের পর বর্ষার এই আবির্ভাব কিন্তু বেশকিছু রোগের সংক্রমণ নিয়ে আসে। সেই তালিকায় সর্দি, কাশি, ভাইরাল জ্বর এবং পেট খারাপের মত রোগ রয়েছে। তবে যদি দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়, তবে অতি সহজেই রেহাই মেলে।
বর্ষা আসার পর প্রতি বছরই কলকাতায় বেশ কয়েকটি ভাইরাল রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এই রোগগুলি নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত চিকিৎসকমহল।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডাঃ দীপ্তাংশু মুখার্জি জানিয়েছেন, প্রতি ২০ জন রোগীর মধ্যে ৭-৮ জনই কান এবং গলার সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে আসছেন। বর্ষার সময় এই সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়। বৃষ্টির জলে ঠান্ডা লেগে কানের নানা ধরণের সমস্যা দেখা যায়। বর্ষায় অনেকের নানা ধরণের অ্যালার্জিও হয়। এই সমস্ত অ্যালার্জি ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া থেকে হয়ে থাকে। সাধারণত প্রবীণ নাগরিক, সন্তানসম্ভবা, ধূমপায়ী এবং ডায়বেটিসের রোগীরা এর ফলে বেশি মুশকিলে পড়েন। তিনি আরও বলেন, এই রোগগুলি হলে প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত রোগীকে ভুগতে হতে পারে। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা করলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
বর্ষার সময় বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি থাকে। ফলে এই পরিবেশ ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়াকে বাড়তে সাহায্য করে। মানুষের ত্বকেও এর প্রভাব পড়ে। ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের চর্মরোগ বিভাগের প্রফেসর ডাঃ অভিষেক দে-র মতে, কয়েকটি চর্মরোগ এই সময় প্রায় সকলেরই হয়ে থাকে। তার মধ্যে তীব্র গরমে ঘামাচি একধরণের ব্যাকটেরিয়া। এছাড়া বর্ষার শুরুতে ত্বকে নানা ধরণের দাগ দেখা যায়। পাশাপাশি খেলোয়াড়দের পায়ে এক ধরণের ছত্রাকঘটিত রোগও দেখা যায়। কমবয়সী ছেলেমেয়েদের ত্বকে ব্রণও এই সময় বেশি হয়। তাঁর পরামর্শ, এই সময় প্রধানত পরিষ্কার এবং শুকনো কাপড় পরতে হবে। ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক প্রধানত ঘাম থেকে হয়। তাই প্রচুর পরিমাণে জল, ফল এবং তাজা সব্জি খেতে হবে। এরফলে ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে।
বর্ষার সময় শ্বাসযন্ত্রের নানা ধরণের সমস্যা দেখা যায়। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্ষার সময় শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা ২০ শতাংশ বেড়ে যায়।
আরজিকর হাসপাতালের বিশিষ্ট ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডাঃ সৌম্য ভট্টাচার্য বলেন, বর্ষার সময় ফুসফুসের নানা ধরণের সমস্যা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। প্রতিদিনই তাঁর কাছে ৫-৬ জন রোগী আসেন যাদের গলায় সমস্যা, ভাইরাল জ্বর, গায়ে ব্যথা, সর্দি-কাশি, ক্ষিদে না পাওয়া এবং ডায়রিয়া হয়েছে। এই সমস্যা প্রবীণদের মধ্যে বেশি, কারণ তাঁদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এই সময় ঘরে তৈরি টাটকা খাবার এবং সঠিক বিশ্রামেই বেশিরভাগ রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। প্রবীণদের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা বেশি দেখা যায়। বিশেষত যাদের কো-মরবিটি, হাই সুগার, হাইপারটেনশন, কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন প্রয়োজন। তবে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করেই।
বর্ষার সময় যাদের সর্দি-কাশির প্রবণতা রয়েছে, তারা প্রতিদিনই মধু খেতে পারেন। এটা অনেকটা উপকার করে। যদিও সারা বছরই মধু সেবন করলে দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বৃদ্ধি পায়।
বাংলার অন্যতম মধু গবেষক স্বর্নেন্দু সরকার জানান, কালো দানার মধু এবং জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা মধু বর্ষার সময় জ্বর, সর্দি, কাশিতে বিশেষ উপকারী। প্রতিদিন সকালে ব্রেকফাস্টের সঙ্গে এবং রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এক চামচ করে মধু সেবন করলে দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। ফলে নিজেকে অনেকটাই সুরক্ষিত রাখা যায়।
অফিসে বেরনোর আগে কোনও মতে নাকে-মুখে গুঁজে খাবার খাচ্ছেন? জানেন অতি দ্রুত খাবার খেলে পাকস্থলীতে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে?
রোদ বৃষ্টির দোলাচলে বাড়তি চাপ হৃদযন্ত্রে? অসময়ে হৃদরোগ থেকে বাঁচতে কোন কোন বিষয়ে সতর্ক হবেন?
মাইগ্রেন গায়েব হবে ম্যাজিকের মতো! মাথা যন্ত্রণা কমাতে চাইলে জেনে নিন এই পাঁচটি ঘরোয়া টোটকা