
সোমবার ০৫ মে ২০২৫
রিয়া পাত্র, নন্দীগ্রাম
কেউ বলছেন ঘুমোতে পারছেন না রাতে। ভয়, আতঙ্ক। কিসের? 'ওরা এসে অত্যাচার করছে'। এই 'ওরা' কারা? ভোটের আগের ঠিক ২৪ ঘণ্টা থেকে ১৪ ঘণ্টা সময়টুকু নন্দীগ্রাম ঘুরে জানা গেল, তৃণমূল, বিজেপি দুই দলের অনুগামী, কর্মীরাই ভয় পাচ্ছেন দুই দলের অনুগামীদের থেকে। তার মধ্যেই পরপর ঘটছেও খুন, ঘরে আগুন, ঘরছাড়া করানোর মতো ঘটনা। রাজ্য রাজনীতিতে নন্দীগ্রাম বহুল চর্চিত। সরকার বদলের পটভূমি হোক কিংবা বিধানসভা ভোট, নন্দীগ্রাম শিরোনামে। সেই নন্দীগ্রাম লোকসভা ভোটের আগে মোটামুটি শান্ত থাকলেও, একেবারে শেষলগ্নে এসে উত্তপ্ত। দোষারোপ, পাল্টা অভিযোগ, পুলিশের ছুটোছুটি, কড়া নিরাপত্তা, নেতাদের জ্বালাময়ী ভাষণ আর আতঙ্ক নিয়ে এখন অপেক্ষা শনিবারের, ভোটবারের। শুক্রবার সকালের দিকে রেয়াপাড়া, ঠাকুর চক, রতনপুর একেবারে শুনশান। মানুষজন রাস্তায় তেমন নেই বিশেষ। হরিপুরের তৃণমূল, বিজেপির দলীয় কার্যালয়ও ঝাঁপ বন্ধ। আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা স্পষ্ট রাস্তাঘাট দেখেই। জায়গায় জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনী, পুলিশ। যদিও ঠিক কত পুলিশ, বাহিনী মোতায়েন সেই বিষয়ে সঠিক পরিসংখ্যান দিতে নারাজ সকলেই। বলছেন, চেষ্টা করছেন, যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়। রেয়াপাড়ার লক্ষণ বাগ, সুনীল গিরি যদিও ভোট নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন। রবিনের সেলুনে খদ্দের নেই, তবে তাঁর ভয়ও নেই ভোট নিয়ে।
ভয়-আতঙ্কের কথা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে সোনাচূড়া, মনসাবাজার এলাকায় কান পাতলে। এই মনসাবাজার এলাকাতেই খুন হয়েছেন রথীবালা আড়ি। জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি সঞ্জয়। সাউথখালিতে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে শোনা গেল চাপা ক্ষোভ। সঞ্জয়ের দুই ছেলে আত্মীয়ের বাড়িতে আপাতত। বুধবার রাতে আচমকা চিৎকার শুনে বেরিয়েছিলেন দুর্গা দলুই। তিনি বিজেপি সমর্থক। জানালেন, রাতে বাইরে গিয়ে দেখেন রথীবালার ওপর হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। সৌমেন চেড় উপস্থিত ছিলেন রথীবালা, সঞ্জয়ের সঙ্গেই। রাতে সকলে মাংস ভাত খেয়ে বুথ ঘুরতে বেরোন বলে জানা গেল। অভিযোগ, আচমকা তৃণমূলের কয়েকজন তাঁদের ওপর চড়াও হয়। যদিও তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানের মতে, গোটা বিষয়টি বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল। অভিষেক ব্যানার্জির সভা এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থনে মানুষের ঢল দেখে মাথা কাজ করছে না শুভেন্দু অধিকারীর। এরমধ্যে সাউথখালিতেই বিজেপি কর্মীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে গিয়েছে। ভগীরথ দলুই, সুকেশ লায়ারা আজ রাত কাটাবেন চিন্তায়। বিজেপি নেতা অভিজিৎ মাইতি জানালেন, আগামিকালের ভোট সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে গেরুয়া শিবির বদ্ধপরিকর। আজ সারারাত দলীয় সমর্থকরা বুথে বুথে পাহারা দেবেন। মহিলাদের হাতে থাকবে শাঁখ। অন্যদল হামলা করলে, মহিলারা শাঁখ বাজিয়ে সংকেত দেবেন।
সাউথখালির একটু অন্যদিকে কান পাতলেই শোনা যাবে অন্য কথা। সাউথখালি চর, জেলেপাড়া সহ বেশকিছু বুথের প্রায় ৬০-৭০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন সাউথখালির ৭ নম্বর জলপাইয়ের। অভিযোগ, তাঁরা সকলেই তৃণমূল সমর্থক, বিজেপি তাঁদের ওপর অত্যাচার করে ঘরছাড়া করেছে। উমারানি পাত্র এখনও আতঙ্কিত। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে হাসুয়া, দা, ছোরা নিয়ে তাড়া করা হয়। অভিযোগের তীর বিজেপির মহিলা কর্মীদের দিকে। মাধুরী আড়ি বৃহস্পতিবার রাত থেকে বাড়ির বাইরে। মনসাবাজার এলাকায় বাড়ি তাঁর। অভিযোগ, মাঝরাতে বিজেপির প্রায় শতাধিক লোক তাঁদের ওপর চড়াও হয়। ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। পুড়ে গিয়েছে জামাকাপড়ও। তাঁদের সকলকে ক্যাম্পে রাখা হয়েছে ২৭৪ নম্বর বুথ এলাকায়। যদিও শুক্রবার দুপুরের ঝড় বৃষ্টিতে ক্যাম্প লণ্ডভণ্ড। ব্যবস্থা হচ্ছে পুনরায় ক্যাম্প তৈরির। সরস্বতী বাজার বিকেলে আবার সকালের মত শুনশান নয়। মানুষজন বেছে বেছে পছন্দের সবজি কিনছেন। ভোট নিয়ে কেউ কথা বলছেন জোরে, কেউ ফিসফিসিয়ে। হিসেব করছেন কোন দল কতটা ভোট পাবেন তা নিয়ে। আতঙ্ক? কেউ কেউ বলছেন, সে তো রয়েছেই। কী হবে কাল আবার! কেউ কেউ বলছেন, নন্দীগ্রামের মানুষ এসব ঝামেলায় ভয় পায় না। কাল ভোট, এটাই আসল।