
সোমবার ০৫ মে ২০২৫
পল্লবী ঘোষ, বীরভূম: পর্দার জনপ্রিয়, সফল অভিনেত্রীর রাজনীতির মঞ্চেও সমান ক্রেজ। বীরভূম এখন তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। কেন্দ্রে দিনের পর দিন জনসংযোগ করে বহিরাগত তকমা মুছে ফেলেছেন। এবারেও তাই বীরভূম কেন্দ্রে শতাব্দী রায়ের উপরেই ভরসা তৃণমূল কংগ্রেসের।
* বাইরে এখন ৪৩ ডিগ্রি। টানা ১২ ঘণ্টা রোদের মধ্যে ঘুরে ঘুরে প্রচার। এত এনার্জি পাচ্ছেন কীভাবে?
শতাব্দী: (হাসতে হাসতে) ভগবান বাঁচিয়ে রেখেছেন। ডায়েটেও কোনও পরিবর্তন আনিনি। হাইড্রেটেড থাকার জন্য মাঝে মাঝে ডাব খাচ্ছি। ২০০৯ সালে যখন প্রথম প্রচার শুরু করেছিলাম, তখন একটু অস্থির লাগত। এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে যখন ক্লান্ত লাগে, গ্রামবাসীদের বিপুল সাড়া পেয়ে সেই ক্লান্তি পথেই কেটে যায়।
* সিনেমার হাত ধরে আপনার দীর্ঘ পথচলা। এদিকে তিনবারের সাংসদ। অভিনেত্রী আর রাজনীতিক শতাব্দী রায়কে কত নম্বর দেবেন?
শতাব্দী: নম্বর দেওয়া খুব কঠিন। অভিনেত্রী শতাব্দী রায় প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিল বলেই রাজনীতিতে নেমেই সফল হতে পেরেছি। দুই ক্ষেত্রেই একটা জিনিস লক্ষ করেছি, মানুষ আমাকে ভীষণ ভালবাসেন। মানুষের এই ভালবাসাটাই নম্বর ধরে নিন।
* বীরভূমে আপনি বহিরাগত ছিলেন। এখানকার মানুষ তা সত্ত্বেও বারবার আপনার উপর ভরসা করছেন কীভাবে?
শতাব্দী: কারণ, গত ১৫ বছরে আমি একটাও মিথ্যে কথা বলিনি। কাউকে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিইনি। যখন কেউ চাকরি চাইতে এসেছেন, সকলকে মুখের উপর বলেছি চাকরির জন্য আমাকে ভোট দিও না। যা আমার হাতে নেই, তার নিয়ে মানুষের মধ্যে মিথ্যে আশা জাগাইনি। আমি রাজনীতিবিদদের মতো রাজনীতি করিনি। আমার মতো করে রাজনীতি করেছি। তাই আপনাআপনি ভরসার জায়গাটা তৈরি হয়ে গেছে।
* এবারে ভোটের প্রচারে বেরিয়ে একাধিকবার বিক্ষোভের মুখে পড়তে দেখা গেছে আপনাকে। এটা কি বিজেপির কৌশল?
শতাব্দী: বিরোধীদের কৌশল কি না জানি না। তবে বিরোধীদের থেকেও বেশি নানা সংবাদমাধ্যমে আমাকে ঘিরে ভুয়ো খবর রটানো হচ্ছে। কোনও একটা ঘটনার আংশিক দিকটা তুলে ধরে, সেটাকেই গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ বলে দেখানো হচ্ছে। আদতে কিন্তু তা নয়। তাই আমিও এবার থেকে গোটা ঘটনার ভিডিও ফুটেজ রেখে দিচ্ছি। এটাও হতে পারে, বিরোধীরাই সেই খবরগুলো ছড়াতে বলছেন। তাতে কোনও লাভ হবে না।
* ২০০৯ থেকে ২০২৪। আপনার প্রচারের, ভাষণের আঙ্গিকে অনেক পরিবর্তন এসেছে। কীভাবে হল এটা?
শতাব্দী: দীর্ঘদিন একটা জায়গায় থাকতে থাকতে হয়ে গেছে। মঞ্চে বারবার পারফর্ম করলে আপনা থেকেই ইমপ্রুভমেন্ট হয়। কর্মী, সমর্থক থেকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে আমি সকলের চাহিদা বুঝে চলার চেষ্টা করেছি। ২০০৯ সালে বীরভূমে এসে অভিনেত্রী সত্তা তুলে ধরা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। আগে বীরভূমে এসে আদিবাসীদের ভাষা বুঝতাম না। তুই করে ডাকলে অবাক হয়ে যেতাম। কিন্তু পরে বুঝেছি, আপন ভাবে বলেই তুই করে ডাকছে। এখন ১৫ বছর পর গ্রামে গ্রামে ঘুরে আমি বলতে পারি, কী কী করেছি, আমার দল কীভাবে সাধারণ মানুষের পাশে আছে। সেটা থেকেই ভাষণের আঙ্গিকে পরিবর্তন এসেছে।
* অনুব্রতহীন বীরভূমে ভোটে লড়াইটা কি কঠিন মনে হচ্ছে?
শতাব্দী: নিঃসন্দেহে ভোটের ময়দানে ওকে মিস করছি। অনুব্রতদাকে ছাড়া পঞ্চায়েতেও লড়েছি আমরা। এবং জিতেছি। এখন যেটা পার্থক্য সেটা হচ্ছে, ছোট ছোট সমস্যাগুলোও আমাকে সামলাতে হচ্ছে। আগে এগুলো অনুব্রতদাই সামলাতেন। ফলে আমার কাছে সেগুলো পৌঁছত না। আমাদের জেলার সংগঠনটা যথেষ্ট স্ট্রং। ভোটে লড়াইটা তাই কঠিন বলে মনে হচ্ছে না।
* এবার ভোটে জিতলে বীরভূমের কোন কোন সমস্যা সমাধান করবেন?
শতাব্দী: বীরভূমে জলের সমস্যাটা মিটছে না। এত গরমে পুকুর সব শুকিয়ে যাচ্ছে। জলের সমস্যাটা মেটানোটা বড় চ্যালেঞ্জ। ওটা নিয়ে কাজ করব। আর এখানে কিছু ব্রিজের চাহিদা রয়েছে। সেটাও পূরণ করার চেষ্টা করব।